×

৫ মিনিটে ওভারথিঙ্কিং(Overthinking) বা অতিরিক্ত চিন্তা দূর করার উপায় 

OVERTHINKING IMAGE

প্রথম অংশ  

Overthinking cover image

আজকালকার যুগে আমরা বেশিরভাগই খুব ব্যস্ত এতে কোনো সন্দেহ নেই।  কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা অনেক সময় কাজ করতে করতেই কোনো একটা বিষয় নিয়ে আমরা অতিরিক্ত চিন্তা বা ওভারথিঙ্কিং(overthinking) করা শুরু করে দিই।  আমার নিজের এই সমস্যা অনেকদিনের। ধরো অফিস থেকে বাসে ঘরে ফিরছি, কাকে একটু হাত নাড়িয়ে টাটা করিনি বলে চিন্তা শুরু হয়ে গেল যে ইশ ও কি ভাববে বা ওকে এরকম ভাবে বলাটা আমার উচিত হয় নি।  

এবং সবথেকে বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে যে একবার ভাবা শুরু হলে আর থামার নাম নেই, চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। আমি নিজে যেহেতু অতিরিক্ত চিন্তা করে থাকি, আমি জানি কতটা বিরক্তি আর হতাশা নিজের উপর জন্মায়।  

এটা ঠিক যে কোনো বিষয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা করা কখনোই ভালো নয় কিন্তু চিন্তাভাবনা করাটা আমাদের জীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ।  কিন্তু সেটা যখন অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখনই সেটা আমাদের শরীর ও মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে যা কখনোই ভালো নয়।  

লিখে ফেলো 

writing your thoughts

প্রথমেই লেখো যা যা ভাবনা চিন্তা তোমার মাথায় আসছে সবকিছু  (কোনো প্রশ্ন, কারোর কোনো উত্তর, তোমার নিজের কোনো যুক্তি- যা মাথায় আসছে )

  • এবার লেখো তুমি কি করতে পারতে এবং সেটার নিচে দাগ দাও। 
  • এবার পয়েন্ট করে লেখো ওই বিষয়ে কি কি ব্যাপার তোমার হাতের বাইরে রয়েছে। 
  • এবার লেখো কোন কাজটা তোমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।  
  • তারপরে কিভাবে সেই কাজটা তুমি করতে পারবে সেটা লেখো।  

একটা বড় শ্বাস নাও 

deep breathing techniques

যখনই দেখছ যে কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা শুরু করে দিচ্ছ চোখ বন্ধ করে একটা বড় করে শ্বাস নাও।দেখবে কিছুক্ষনের মধ্যেই তোমার এই ওভারথিঙ্কিং(overthinking) করা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথমে যেকোনো একটা জায়গায় চোখ বন্ধ করে বসে পড়ো।  তারপরে নিজের ডান হাতটা বুকের উপর রেখে বড় করে শ্বাস নাও ও ছাড়ো। যতক্ষণ ধরে শ্বাস নেবে, নিঃশ্বাস ছাড়বে তারও বেশি সময় ধরে।  শ্বাস নেওয়া ছাড়ার সময়ে খেয়াল করো কিভাবে তোমার বুকের উপর রাখা হাত উপরে উঠছে আর শ্বাস ছাড়ার সময়ে নামছে।  

এইভাবে পাঁচমিনিট ধরে করতে থাকো। দেখবে তোমার চিন্তা বা টেনশন অনেকটাই কমে গেছে এবং তুমি তুলনামূলক ভাবে একটু ভালো বোধ করছ।  আমার্ নিজের যখনই খুব টেনশন হয় বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে ওভারথিঙ্কিং করতে থাকি, এটা করা শুরু করে দিই।  আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে খুব উপকার পেয়েছি।  

মনের মধ্যে কিলবিল করা চিন্তাগুলোকে চিহ্নিত করো (automatic negative thoughts – ANTs)

itentify automatic negative thoughts

আমাদের মনের মধ্যে সারাদিনে হাজারটা চিন্তা খেলা করতে থাকে। আর যারা ওভারথিঙ্কিং করে তাদের তো কথাই নেই, সবসময়ই কোনো না কোনো চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই সবসময় নিজের কাছে একটা ছোট্ট নোটবুক বা খাতা রাখার চেষ্টা করো আর যখনই কোনো চিন্তা মাথায় আসবে লিখে নাও।  

সারাদিনে যা যা চিন্তা তোমার মাথায় আসছে যেগুলো তোমার মনে সমস্যার সৃষ্টি করছে, লিখে ফ্যালো।  কোন কোন কারণগুলো তোমার এই চিন্তার জন্য দায়ী সেটাও  লেখো।  তারই সঙ্গে লেখো এই চিন্তাগুলোর জন্য তুমি নিজে কেমন অনুভব করছ, এবং নিজেকে নিজে কি কথা বলেছ! 

এবার যে চিন্তাটা করছ তার একটা বিকল্প চিন্তা করার চেষ্টা করো।  ধরো, তুমি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ, মনের মধ্যে চিন্তারা আকুলি বিকুলি করছে যে এত কম সময়ে তোমার কোনো প্রস্তুতি নেই  তাই তুমি পাশ করতে পারবে না।  এই চিন্তা করার বদলে এটা নিজেকে বলো যে যতটুকু সময় আছে, আমি প্রানপন চেষ্টা করছি, পাশ করব কি করব না সেটা পরে দেখা যাবে। 

৫-৪-৩-২-১

5-4-3-2-1 technique to reduce overthinking

আরেকটা খুব ভালো উপায় হল নিজের ইন্দ্রিয়গুলোকে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করানো। ৫-৪-৩-২-১  খুব কার্যকরী একটি উপায়। যখনি টেনশন হবে বা অতিরিক্ত চিন্তার (overthinking) জন্য মাথা ফেটে যাচ্ছে মনে হবে, এই কাজটা করা শুরু করবে –

  • তোমার চারপাশে দেখতে পাচ্ছ এমন পাঁচটা জিনিসের নাম বলো। 
  • চারটা জিনিসের নাম নিজেকে বোলো যা তুমি ছুঁতে পারবে। 
  • এমন তিনটে বিষয় যা তুমি শুনতে পাচ্ছ।  
  • এমন দুটো বিষয় বা জিনিস যার গন্ধ তুমি এই মুহূর্তে পাচ্ছ।  
  • এমন একটা বিষয় বা জিনিস যার স্বাদ তুমি পাচ্ছ।  

তুমি সেই চিন্তাই করছ কিন্তু তার ধরণ পাল্টে যাচ্ছে।  ফলত তোমার অতিরিক্ত চিন্তা বা ওভারথিঙ্কিং করা বন্ধ হবে এবং দুশ্চিন্তাও কিছুটা কমবে। 

বেশি ভাবছ (overthinking)? একটা রুটিন করে নাও 

thinking about your thoughts

খুব আজব শোনাচ্ছে তাই না? অতিরিক্ত চিন্তা কমানোর জন্য ব্লগ পড়তে এসে দেখা যাচ্ছে একিরে বাবা এ তো চিন্তা করতে বলছে! তাই আবার হয় নাকি! একদমই ঠিক পড়ছ! তোমাকে চিন্তা করতেই বলা হচ্ছে কিন্তু সবসময় নয়।  

তোমার সারাদিনের কাজের ফাঁকে একটা রুটিন করে নাও যে আমি প্রতিদিন এই ১৫ মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা করব।  কিন্তু যেই তোমার নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবে, সেই দিনের জন্য সমস্ত ভাবনা মুলতবি রেখে আবার পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।  এতে করে তোমার অতিরিক্ত চিন্তা করার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে এবং তুমি অন্যান্য কাজেও মনোযোগ দিতে পারবে।  

তোমার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা উল্লেখ করো 

identify postive things

আজকালকার দিনে জার্নালিং খুব জনপ্রিয় একটি শব্দ। অনেকেই অনেক দামি দামি ও খুব সুন্দর ডায়রি কিনে তাতে প্রতিদিনের বিষয় লিখে রাখে। কিন্তু অতকিছু করার দরকার নেই! তোমার কাছে যদি কোনো খাতা বা ডায়রি থাকে তাহলেই চলবে! সেই খাতায় লেখো:

  • এমন কোন তিনটে জিনিস আছে যার জন্য আজকের দিনে তুমি নিজের জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ।
    এমন তিনজন মানুষের নাম লেখো যারা তোমার জীবনে থাকার জন্য তুমি কৃতজ্ঞ এবং সঙ্গে কারণটাও লিখতে ভুলো না।  
  • এমন কোন তিনটে জিনিস আছে যার জন্য তুমি নিজের জন্য কৃতজ্ঞ। 

খুব ভেবেচিন্তে উত্তরগুলো লেখার চেষ্টা করবে। তাতে তোমার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে তুমি আরও বেশি করে অনুভব করতে পারবে আর তোমার দুশ্চিন্তাও (overthinking) অনেকটাই কমবে।  

এমন কার্যকরী আরো অনেক উপায় আছে যা করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা অনেকটাই কমবে।  দ্বিতীয় অংশে আমি একজন সাইকোলজিস্টের ইন্টারভিউ (Interview with a psychologist in Kolkata)প্রকাশ করব যেখানে উনি ওভারথিঙ্কিং ও তা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিশদে বলবেন।  আশা করি, তা তোমাদের কাজে লাগবে। 

জানাতে ভুলো না আজকের ব্লগ তোমাদের কেমন লাগল পড়তে।  তোমাদের যদি কোনো সাজেশন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানিও।  

seperator

Post Comment