মা ঠাকুরমার গন্ধ জড়ানো ঘরে তৈরী ঘি
আমরা যারা গ্রাম কি মফস্বলে বেড়ে উঠেছি, তারা সেই ছোটবেলা থেকে ঘরের তৈরী খাঁটি ঘি খেয়ে মানুষ। শহরের এই ভেজাল ডালডা মেশানো ঘি ভাতে সেই ঘরের মায়ের আঁচলের গন্ধ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘি অর্ডার করে আনিয়েও সেই স্বাদ ও গন্ধের আজ বড়ই অভাব। তাই নিজেই ঘরে ঘি বানানোর চেষ্টা করলাম এবং যতটা কঠিন ভেবেছিলাম, ততটাও নয়। চলো দেখে নেওয়া যাক ঘরে তুমি কিভাবে ঘি তৈরী করতে পারবে?
প্রথমেই দরকার ভালো গুণমান সম্মত দুধ। যেহেতু দুধেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভেজাল মেশানো থাকে, তাই আমি এক্ষেত্রে আমুলের ফুল ক্রিম দুধ ব্যবহার করেছি। এই দুধের বিশেষত্ব হল দুধ পুরো সরে পরিপূর্ণ।

ঘরে তৈরী ঘি – প্রথম ধাপ
প্রথমেই ২৫০ গ্রামের চার প্যাকেট দুধ অর্থাৎ ২ কিলো দুধ বাটিতে ঢেলে নিলাম। এরপরে দুধ গরম করার প্যানের তলায় ও চারপাশে অল্প ঘি মাখিয়ে নিলাম। এতে করে তলায় দুধ ধরে যাবে না ও উথলেও উঠবে না। দুধ একবার উথলে উঠলে, গ্যাস একদম নিভু আঁচে আধ ঘন্টা বা তিরিশ মিনিটের মত ফুটতে দেবে। দেখবে দুধ অনেকটাই ঘন হয়ে গেছে আর উপরে মোটা সর পড়েছে।
এবার গ্যাস বন্ধ করে দুধটাকে একটা পাত্রের মধ্যে ঢেলে ঘন্টাখানেক একটু ঠান্ডা করতে রেখে দাও। তারপরে দুধের পাত্রকে ফ্রিজের মধ্যে রেখে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা রেখে দাও। ৯ ঘন্টার পর দুধের পাত্রটাকে ফ্রিজ থেকে বের করে দেখবে রুটির মত মোটা সর পড়েছে। চাকু দিয়ে প্রথমে ধারগুলো চেঁছে নাও তাতে সর তুলতে সুবিধে হবে।


কীভাবে সর তুলবে ?
এরপর সরটাকে উপরের দিকে অর্ধেক উল্টে দাও এবং সঙ্গে সঙ্গে নিচে হাত ঢুকিয়ে সরটাকে দুধের উপর থেকে তুলে নাও। আমি ভিডিওতে দেখিয়েছি কিভাবে সর তুলতে হয়। সেরকমভাবে করার চেষ্টা করো, দেখবে সরের পিঠে ভেঙে যাবে না। এবার সরটাকে নতুন একটা এয়ারটাইট টিফিন বক্সে রেখে দাও।
এবার যে দুধটা পরে থাকল তাকে তুমি আবার আগের মত জ্বাল দিয়ে সর বসাতে পারো, অনেকটাই মালাই উঠবে। নয়ত ছানা বা পনির বানিয়ে নিতে পারো। যদি আবার সর তুলতে হয়, আগেরবারের নিয়ম মত দুধকে জ্বাল দিয়ে ফ্রিজে ৮ থেকে ৯ ঘন্টার মত ঠান্ডা করতে রেখে দাও।
মাখন তৈরী করার পদ্ধতি
এরকমভাবে আরও দুইবার ২ কিলো দুধ কিনে একই পদ্ধতিতে সর বা মালাই তুলে টিফিন বক্সে রেখে দাও। টিফিন বাক্স ভরতি হয়ে গেলে অল্প অল্প মালাই নিয়ে মিক্সিতে বেশ কয়েকটা বরফের টুকরো আর ঠান্ডা জল দিয়ে বেশ কয়েক মিনিট ঘুরিয়ে নাও। দেখবে উপর থেকে মাখন ভেসে উঠেছে। সেই মাখনটাকে হাত দিয়ে তুলে একটু আলতো চাপ দিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত জল বের করে আলাদা পাত্রে রেখে দাও।

এইভাবে প্রত্যেকবার এক থেকে দুই হাতা মালাই মিক্সিতে নিয়ে ঘুরিয়ে মাখন বের করে নাও। তুমি চাইলে এই বাটারকে নুন দিয়ে প্রস্তুত করে বাটার পেপারে রেখে দিতে পারো। তোমার ঘরে তৈরী বাটার প্রস্তুত। যাই হোক, এবার সেই মাখনটাকে নিয়ে গ্যাসে কড়াই বসিয়ে গরম করতে বসিয়ে দাও।


মাখন জ্বাল দেওয়া – শেষ ধাপ
প্রথমে দেখবে মাখনটা গলে গিয়ে সোনালী রংয়ের তরলে পরিণত হল আর অনেকটা উঠলে উঠছে। এই সময় কখনোই গ্যাস হাই ফ্লেমে দিয়ে ঘি তৈরী করবে না, পুড়ে যেতে পারে। তাহলে আর খেতে ভালো লাগবে না। গ্যাস একদম অল্প আঁচে দিয়ে মাখনটাকে নাড়াতে থাকো। কিছুক্ষন পর দেখবে তেলের মত ভেসে উঠছে আর নিচে সোনালী রংয়ের ছিবড়ে মত পরে আছে।


এখনই ঘি নামিয়ে নেবে না, ওই অল্প আঁচে ঘিটাকে নাড়াতে থাকবে যতক্ষণ না ওই সরের টুকরো গুলো একদম বাদামি থেকে প্রায় কালো বর্ণ ধারণ করছে। তারপর ঘি টাকে একটা পাত্রে নামিয়ে ঠান্ডা করে কাচের শিশিতে ভরে নাও। তৈরী ঘরে তৈরী ঘি যার স্বাদ ও গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে তোমার গোটা ঘর।



Post Comment